খুলনায় মনের সঙ্গে ভাঙছে ঘর। করোনা সংকট শুধু মানুষের মনই ভাঙেনি, ঘরও ভাঙছে। মহামারীতে ঘরবন্দি থাকাকালে মানসিক-সামাজিক টানাপড়েনে বিবাহবিচ্ছেদের পরিসংখ্যান ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে। খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) পরিসংখ্যান বলছে, শুধু সিটি এলাকাতেই প্রতিমাসে ১৪৫টি তালাকের নোটিশ জমা পড়ছে। এর অধিকাংশ তালাক কার্যকর হচ্ছে। আবার কারও কারও সংসার শেষ রক্ষার আপ্রাণ চেষ্টা চলছে।
কেসিসি সালিশি পরিষদের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সালিশি পরিষদের কাছে ৭২৫টি তালাকের নোটিশ জমা পড়েছে। এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে ১৫৪টি, ফেব্রুয়ারিতে ১৩৪টি, মার্চে ১৩৫টি, জুনে ১১৯টি এবং আগস্টের ৫ তারিখ পর্যন্ত দুটি নোটিশ জমা পড়েছে। আর করোনার কারণে এপ্রিল ও মে মাস সিটি করপোরেশনের অফিস কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এর আগে ২০১৯ সালে ১ হাজার ৭০৬টি তালাকের নোটিশ জমা হয় কেসিসিতে। ১৯৭৪ সালের মুসলিম বিবাহ ও তালাক রেজিস্ট্রেশন আইন অনুযায়ী কাজীর মাধ্যমে তালাক দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তালাকের নোটিশ স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে অথবা স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে এবং স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভা/সিটি করপোরেশনকে পাঠাতে হবে।
কেসিসির সচিব (উপসচিব) আজমুল হক বলেন, পুরুষের পক্ষ থেকে নারীকে বা নারীর পক্ষ থেকে পুরুষকে তালাকের নোটিশ দেওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে যদি সালিশের মাধ্যমে উভয়ের সমঝোতা না হয় বা যাকে তালাকের নোটিশ পাঠানো হয়েছে সে যদি সাড়া না দেয় তা হলে ৯০ দিন পর তালাক কার্যকর হয়ে যায়। তবে গ্রামের তুলনায় শহরে তালাকের সংখ্যা বেশি।
সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের জেলা সম্পাদক অ্যাডভোকেট কুদরত ই খুদা বলেন, করোনার কারণে লকডাউনে কাজকর্ম শিথিল হওয়া ও দীর্ঘ সময় বাড়িতে অবস্থান করায় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সামান্য কারণেই মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং হচ্ছে। এটি বিচ্ছেদের প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ কারণেই বর্তমানে বিচ্ছেদের সংখ্যা বেশি।
খুলনা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) জেসমিন পারভিন বলেন, অনেক পুরুষ আছেন যারা স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও আবার বিয়ে করতে চান। তখন প্রথম স্ত্রীকে নিয়ে সংসার করতে চান না। তখনি চলে আসে বিচ্ছেদের বিষয়টি। ভুক্তভোগী নারীরা কোনো প্রতিকার পাননি। আবার অনেক নারী আছেন যারা তালাকের নোটিশ পেয়ে না বুঝেই রিসিভ করে ফেলেন। একবার রিসিভ করার পর আর প্রতিকারের কোনো সুযোগ থাকে না।
Leave a Reply